ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৪ মে, ২০২৩ ১৫:২৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৭৮ বার
সরকার অতীতের মতো আবারও বাসে আগুন দিয়ে বিএনপির ওপর দায় চাপানোর পুরোনো নাটক শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, ‘এই মাফিয়া সরকার সম্পূর্ণ গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাদের সমাবেশগুলোতে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি দেখা যায় না। সম্মেলনস্থলের চেয়ার খালি থাকে। তাদের গণভিত্তি ধসে গেছে। তাই পেশিশক্তি, সন্ত্রাস ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে জনগণের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে ওরা টিকে থাকতে চায়। পুলিশ ভাইদের বলব, অগণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষ নিয়ে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না। এই সরকারই শেষ সরকার নয়। জনগণের সরকার অচিরেই প্রতিষ্ঠিত হবে। মাফিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন হবে। অতি বাড়াবাড়ি যারা করবে, তাদের উপযুক্ত পরিণতি ভোগ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। এটি সরকারের একটি অশুভ পরিকল্পনা। এই মামলাতেও আসামি ছিলেন শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে নিয়ে আওয়ামী প্রধানের নাম এই মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিচারকাজ চালানো হচ্ছে। কারণ অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বলতে ভালোবাসেন। নিপীড়নের খড়্গ চালিয়ে যেতে তিনি আইন-আদালতকে নাৎসিবাদী ক্ষমতার দ্বারা যথেচ্ছ ব্যবহার করছেন। নাইকো মামলায় খালেদা জিয়ার বিচারকাজ সম্পূর্ণরূপে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উগ্রতা ও প্রতিহিংসা। শেখ হাসিনা তার বিরোধীদের জীবন, সম্পদ, সম্পত্তি, নিরাপত্তা সম্পূর্ণভাবে বিপন্ন করে যাচ্ছেন।’
রিজভী বলেন, ‘গণআন্দোলনে ভীত আওয়ামী লীগ খেই হারিয়ে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার ঘোষণা দিয়ে বিএনপির ওপর নারকীয় উন্মত্ততায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বৈঠক করে পরিকল্পিতভাবে বিএনপির নেতাকর্মী ও মিছিল-সমাবেশের ওপর হামলা চালাচ্ছে, গুলি চালাচ্ছে। চারদিকে বিদায় ঘণ্টা বাজায় তারা মরণকামড় দিতে শুরু করেছে। যতই দিন যাচ্ছে, ততই ভোট ডাকাত সরকারের হিংস্রতা প্রকট হচ্ছে। ভোটাধিকারের ন্যায্য দাবি, অত্যাচার, উৎপীড়ন, খুন, গুম, লুণ্ঠন, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনগণের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিও সহ্য করতে পারছে না। ছাত্রলীগের বাছাই করা ক্যাডারদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে ঢুকিয়ে তাদের দিয়ে হায়েনার মতো হামলে পড়ে পদযাত্রা, মিছিল-সমাবেশ ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া হচ্ছে। গায়েবি মামলা, গ্রেপ্তার-নির্যাতনের চণ্ডনীতিতে নেমেছে নিশিরাতের সরকার। সারা দেশের জনপদের পর জনপদ আওয়ামী সংগঠনের নেতাকর্মীর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অস্ত্রসজ্জিত করা হয়েছে এবং উজ্জীবিত করা হয়েছে বিএনপিসহ বিরোধী দল ও মতকে নিশ্চিহ্ন করতে।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সমাবেশে তাদের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মুখে ফ্যাসিবাদী হুংকার শুনেছেন নিশ্চয়ই। ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার হুমকি দিয়ে বলেছেন, বিএনপিকে ঠান্ডা মাথায় নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে। দুদিন আগেও তিনি বলেছিলেন, এখন থেকে শান্তি সমাবেশ নয়, সারা দেশে বিএনপিকে প্রতিরোধ করতে হবে। বিএনপির আস্তানা গুঁড়িয়ে দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ওবায়দুল কাদেরসহ তাদের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের এই হুংকারের পর বিএনপির ওপর হামলা-মামলা-আটকের অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে পুলিশ, র্যাব, সোয়াট বাহিনী। সায়েন্স ল্যাব এলাকায় আমাদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় বিনা উসকানিতে হামলা করেছে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের বিশেষ শুঁড়িয়ে দেওয়া বাহিনী। বৃষ্টির মতো টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ছুড়েছে; আমাদের বহু নেতাকর্মীকে আহত করেছে, রাজপথের সাহসী কণ্ঠস্বর সরকারের আতঙ্ক বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী শেখ রবিউল আলমসহ ২৫ নেতাকর্মীকে আটক করেছে, অতীতের মতো আবারও বাসে আগুন দিয়ে বিএনপির ওপর দায় চাপানোর পুরোনো নাটক শুরু করেছে। রাজশাহীতে পুলিশ অঘোষিত সান্ধ্য আইন জারি করেছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে তাণ্ডব চালিয়েছে। ঢাকা থেকে সোয়াট বাহিনী গিয়ে রাজশাহী বিএনপি কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে। পরশু দিন সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে রাজশাহী জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমেদ শামীম সরকারকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়ে এখনো স্বীকার করছে না। এটি দল এবং তার পরিবারে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। ওবায়দুল কাদেরের হুমকি বাস্তবায়ন করছে আওয়ামী চেতনায় লালিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, কেন্দ্রীয় নেতা মো. মুনির হোসেন, আসাদুল করিম শাহীন প্রমুখ।